Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

গ্রাম আদালত

ভীমপুর ইউনিয়ন পরিষদে প্রতি সপ্তাহের সোমবার সকাল ১০ ঘটিকার সময় গ্রাম আদালত বসে। গ্রাম আদালতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদের  সদস্য . সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা ও এলাকার গন্য মান্য  ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকেন।

.:: গ্রাম আদালত সম্পর্কে কিছু তথ্য ::.

----------------------------------------------

গ্রাম আদালত
পল্লীগ্রামে অধিকার বঞ্চিত আপামর জনগণের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠারলক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে গ্রাম আদালত গঠিত হয়েছে ৷ গ্রাম আদালত গ্রামের মানুষের সবচাইতে কাছের আইনগত প্রতিকার পাবার আশ্রয়স্থল ৷ কম খরচে কম সময়ে গ্রাম পযার্য়ে ছোটখাটো অপরাধের বিচার কাজ নিস্পত্তির জন্যই গ্রাম আদালত ৷ গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ ১৯৭৬ অনুযায়ী গ্রাম আদালতের যাবতীয় কাযর্ক্রম প্ররিচালিত হয় ৷
গ্রাম আদালত গঠন
গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান এবং বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষে দু'জন করে প্রতিনিধি নিয়ে অর্থাৎ মোট ৫ জন সদস্য নিয়ে গ্রাম আদালত গঠিত হয় ৷ উভয়পক্ষের মনোনীত দু'জন বিচারকের মধ্যে একজনকে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হতে হয় ৷ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ৷ যদি কোনও কারনে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে অপারগ হন অথবা তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে তাহলে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ইউনিয়ন পরিষদের অন্য কোনও সদস্যকে (যাকে কোনও পক্ষ মনোনীত করেনি) গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান মনোনীত করেন ৷ যদি কোনও পক্ষ ইউনিয়ন পরিষদের কোনও সদস্যকে পক্ষপাতিত্বের কারণে মনোনীত করতে না পারেন তাহলে চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে অন্য কোনও ব্যক্তিকে গ্রাম আদালতের সদস্য করা যাবে ৷
গ্রাম আদালতের এখতিয়ার
গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ ১৯৭৬ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালতে ফৌজিদারী ও দেওয়ানী এ দু'প্রকার মামলার বিচার হতে পারে ৷
ফৌজদারী বিষয়সমূহ
***বেআইনী জনতার সদস্য হওয়া বা দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্ত (বে-আইনী) জনতার সদস্য সংখ্যা ১০ বা তার কম হতে হবে (ধারা ১৪৩ ও ১৪৭ দঃ বিঃ), সাধারণ আঘাত, অপরাধজনক অনধিকার প্রবেশ, ক্ষতিকারক কাজ, ক্ষতির পরিমাণ সবোর্চ্চ ৫,০০০ টাকা (ধারা ৩১২, ৪২৭ ও ৪৪৭ দঃ বিঃ) হাতাহাতি, বে-আইনি অবরোধ, অবৈধ শক্তি প্রয়োগ, অবৈধ ভয়ভীতি প্রদর্শন, মাদকাসক্তি, ইঙ্গিতের মাধ্যমে নারীর শ্লীলতাহানি ইত্যাদি (ধারা ১৬, ৩৩৪, ৩৪১, ৩৪২, ৩৫৮, ৫০৪ (১ম ভাগ), ৫০৮, ৫০৯ ও ৫১০ দঃ বিঃ);
***সকল ধরনের চুরি (চুরিকৃত মূল্যের পরিমাণ ৫,০০০ টাকা বা তার কম হলে (ধারা ৪৭৯, ৩৮৫ ও ৩৮১ দঃ বিঃ);
***অস্থাবর সম্পদ আত্মসাত, বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা, দলিলাদির ধ্বংস সাধন (ধারা ৪০৩, ৪০৬, ৪১৭ ও৪২০ দঃ বিঃ)৷
দেওয়ানী বিষয়সমূহ
*** চুরির টাকা আদায়ের মামলা
***অস্থাবর সম্পত্তি উদ্ধার বা তার মূল্য আদায়ের মামলা
***দখল হারানোর এক বছরের মধ্যে স্থাবর সম্পত্তি দখল উদ্ধারের মামলা
***ধ্বংসকৃত অস্থায়ী জিনিসপত্রের ক্ষতিপূরন আদায় সংক্রান্ত মামলা
***গবাদি পশুর অনধিকার প্রবেশের জন্য খেসারতের মামলা
***কতগুলো ক্ষেত্রে গ্রাম আদালত বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারে না, যেমন -
    - অভিযুক্ত ব্যক্তি আগে যদি কোনও উচ্চতর আদালত কর্তৃক দন্ডিত হয়ে থাকে
    - যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির সম্পত্তি জড়িত থাকে
    - বিদ্যমান কলহের ব্যাপারে কোনও সালিসের ব্যবস্থা করা হলে
    - সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা কোনও সরকারী কর্মচারীর পক্ষ হয়ে থাকলে৷

কোর্ট ফি :
গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট মামলার আবেদন পত্র দায়ের করতে হবে৷ ফৌজদারী মামলা হলে দু'টাকার এবং দেওয়ানী মামলা হলে চার টাকা ফি লাগবে ৷ দরখাস্তের সাথে ফি প্রদানের রসিদ দাখিল করতে হবে ৷
গ্রাম আদালতের স্থান নিরধারণ :
যে ইউনিয়নে এলাকার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সে ইউনিয়নে গ্রাম আদালত গঠিত হয় ৷ একটি ইউনিয়ন এলাকায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিন্তু বিবাদী অন্য ইউনিয়নের হলে স্ব-স্ব ইউনিয়ন হতে সদস্য মনোনয়ন দিতে পারেন ৷
গ্রাম আদালতের ক্ষমতা :
গ্রাম আদালত সবোর্চ্চ ৫,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলা করতে পারে ৷ দু'টি ক্ষেত্রে গ্রাম আদালত জরিমানা করতে পারে
প্রথমতঃ গ্রাম আদালত অবমাননার দায়ে সবোর্চ্চ ৫০০ টাকা জরিমানা ৷
দ্বিতীয়তঃ রাষ্ট্রীয় গোপনীয় নয় এমন দলিল দাখিল করতে অস্বীকার বা সমন দিতে অস্বীকার করলে সবোর্চ্চ ২৫০ টাকা জরিমানা করতে পারে৷
গ্রাম আদালতের কাযর্পদ্ধতি :
গ্রাম আদালত কর্তৃক বিচারযোগ্য দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে ৪ টাকা ও ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে ২ টাকা ফি দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট বিচার প্রার্থী আবেদন করতে পারে ৷ আবেদনপত্রে নিম্নে বর্ণিত বিবরণাদি থাকতে হবে:
***ইউনিয়ন পরিষদের নাম
***আবেদনকারীর নাম ও ঠিকানা
***বিবাদীর নাম ও ঠিকানা
***ইউনিয়ন পরিষদের নাম, যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে
***সালিশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ৷
গ্রাম আদালতের বিচার পদ্ধতি :
***আবেদনপত্র গৃহীত হলে তা ১ নম্বর ফরমে লিপিবদ্ধ করতে হয় ৷ অভিযোগ অমূলক মনে হলে চেয়ারম্যান আবেদন নাকচ করে দিতে পারেন ৷ নাকচের আদেশ অন্যায়ভাবে করা হলে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তি ৩০ দিনের মধ্যে সহকারী জজ/ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট পুনঃবিবেচনার জন্য আবেদন করতে পারেন৷
***আবেদন গৃহীত হলে নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ে বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষকে উপস্থিত হতে চেয়ারম্যান সমন দেবেন ৷ সমন ব্যক্তিগতভাবে জারি করতে হবে, সমনের উল্টো পৃষ্ঠায় সমন প্রাপকের প্রাপ্তি সূচক স্বাক্ষর নিতে হবে ৷ বিবাদীকে পাওয়া না গেলে সমনের এক প্রস্থ তার বাড়ির প্রকাশ্য স্থানে টানিয়ে দিতে হবে এবং তাতে সমন জারি হয়েছে বলে গণ্য হবে ৷
***সমন জারি এক সপ্তাহের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাদী এবং বিবাদী উভয় পক্ষকে তাদের সদস্য মনোনীত করতে বলবেন এবং মনোনীত সদস্য নিয়ে আদালত গঠিত হবে ৷ আদালত গঠিত হওয়ার ৩ দিনের মধ্যে প্রতিপক্ষকে লিখিত আপত্তি দাখিল করতে বলবেন ৷ লিখিত না দিলে মৌখিকভাবে বলতে বা তা লিপিবদ্ধ করতে হবে৷ নির্দিষ্ট দিনে আদালত বিচারে বসবে ৷ শুনানি ৭ দিনের বেশি স্থগিত রাখা যাবে না ৷
***আবেদনকারী নির্ধারিত তারিখে হাজির হতে ব্যর্থ হলে চেয়ারম্যান যদি মনে করেন আবেদনকারী অবহেলা করছে তাহলে তিনি আবেদন নাকচ করতে পারেন৷
***নাকচের ১০ দিনের মধ্যে পুনঃবহাল করে মামলার তারিখ নির্দিষ্ট করবেন ৷
***অনুরূপভাবে বিবাদী অবহেলা করে অনুপস্থিত থাকলে চেয়ারম্যান মামলার শুনানি নিষ্পত্তি করবেন ৷ এক্ষেত্রে ১০ দিনের মধ্যে বিবাদী আবেদন করলে মামলাটি পুনঃবহাল করে শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করবেন ৷
গ্রাম আদালতের সিদ্ধান্ত:
গ্রাম আদালতের রায় প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে হবে৷ সিদ্ধান্ত সবর্সম্মত বা চার পঞ্চমাংশ ভোটে গৃহীত হলে তার বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে না ৷ যদি দু-তৃতীয়াংশ ভোটে সিদ্ধান্ত হয়, তার বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে৷ সিদ্ধান্ত ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে যে কোনও পক্ষ ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে থানা ম্যাজিস্ট্রেট এবং দেওয়ানী মামলার মামলার ক্ষেত্রে সহকারী জজ (মুন্সেফ) এর আদালতে আপীল করতে পারবেন৷
জরিমানা আদায় :
আদালত অবমাননা ও ইচ্ছাকৃতভাবে সমন অমান্য করার জন্য জরিমানা হলে অথবা জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে অস্বীকার করলে নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হবার পর তথ্য উল্লেখ করে থানা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠালে তিনি তার নিজের কোর্টের রায় মনে করে তা আদায় করে দেবেন এবং অনাদায়ে জেল/জরিমানা হতে পারে৷ ক্ষতিপূরণের টাকা নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বকেয়া টাকা হিসাবে আদায় করা হবে ৷

 

অনেকে গ্রাম আদালত এবং সালিসী ব্যবস্থাকে এক করে ফেলে ৷ গ্রাম আদালত এবং সালিসী ব্যবস্থা দু'টি ভিন্ন জিনিস ৷ গ্রাম আদালতে দেওয়ানী এবং ফৌজদারী দুই ধরনের বিচার করার ক্ষমতা রয়েছে ৷ কিন্তু সালিসী ব্যবস্থায় শুধুমাত্র পারিবারিক সমস্যার (যেমন - ভরণপোষন, দেনমোহর, বহুবিবাহ ইত্যাদি) সমাধান করা হয় ৷ সালিসী ব্যবস্থা যে কোন ব্যক্তি বা যে কোন সংস্থা করতে পারে৷

.:: সালিশী ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছু তথ্য ::.

---------------------------------------------------

১) সালিস
মানুষ সামাজিক জীব৷ সমাজ মানুষের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করে ৷ সমাজ মানুষকে দেয় নিরাপত্তার সাথে বসবাসের সুযোগ , আবার সমাজে মানুষ নানা প্রতিকূল অবস্থার শিকার হয় ৷ বিবাদ-বিসংবাদ , কলহ-ঝগড়া সমাজে লেগেই থাকে৷ বিবাদ-ঝগড়ায় মধ্যস্থতা বা সালিসী এক চিরায়ত ব্যবস্থা৷ সমাজে সৌহার্দ-সম্প্রীতি এবং সহযোগীতার মনোভাব গড়ে তুলতে সালিসী ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম৷ কোর্টের মামলার বিচার ব্যয়বহুল এবং অনেক সময়ের ব্যাপার বলে গ্রাম অঞ্চলে সালিস বেশ জনপ্রিয় ৷

২) সালিসী ব্যবস্থা
সালিসী ব্যবস্থা একটি সম্পূর্ণ সামাজিক প্রক্রিয়া৷ ঝগড়া-বিবাদ মিটাবার জন্য সালিসী ব্যবস্থা একটি সহজ পদ্ধতি ৷ এ ব্যবস্থায় একজন নিরপেক্ষ তৃতীয় ব্যক্তি বা ব্যক্তিগন বিবাদরত দলের সাথে সামনাসামনি ও খোলাখুলি ভাবে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে সমঝোতায় পৌঁছাতে সাহায্য করে থাকেন ৷ অর্থাৎ সালিস এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে বিবাদরত ব্যক্তিগন স্বতঃস্ফূর্ত এবং স্বেচ্ছা প্রনোদিত হয়ে তাদের সমস্যা সমূহ সমাধানের উদ্দেশ্যে সালিশকারীর উপস্থিতিতে এক বা একাধিক বৈঠকে মিলিত হয়ে সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হয়৷  মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ - ১৯৬১ তে সালিসী ব্যবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে  - সালিসী ব্যবস্থা হলো ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় তালাক , বহুবিবাহ ও খোরপোষ সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করার জন্য একটি ক্ষমতাবান আইনগত পরিষদ ৷

এক্ষেত্রে সালিসী ব্যক্তি কোনো বিচারক নন এবং তিনি কোনো আইন প্রয়োগও করেননা ৷ শুধুমাত্র তিনি বিবাদরত দুই দলকে মীমাংসায় পৌঁছাতে আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকেন মাত্র৷ কিন্তু বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সালিসী ব্যবস্থায় কাউকে কোনোরূপ শাস্তি দেওয়া যাবেনা বা দোষী করা যাবেনা ৷ বিশ্বাস ভংগ করা যাবেনা এমনকি এরূপ প্রতিশ্রুতি করা যাবেনা যা কখনো কার্যকর করা সম্ভব নয় ৷

৩) সালিস পরিষদের গঠন
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (এখানে চেয়ারম্যান বলতে  ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অথবা পৌরসভার চেয়ারম্যান অথবা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের মেয়র বা প্রশাসক অথবা মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ - ১ঌ৬১ অনুযায়ী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের জন্য ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় সরকার কর্তৃক নিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে বোঝায় ) এবং বিবাদরত পক্ষসমূহের প্রত্যেক পক্ষের একজন করে  প্রতিনিধিসহ  মোট ৩ জন নিয়ে সালিসি পরিষদ গঠন করা হবে ৷ প্রয়োজনে একাধিক সালিসদার নিয়োগ করা যেতে পারে ৷ সালিসদার ব্যক্তি অবশ্যই একজন নিরপেক্ষ ও জ্ঞানী ব্যক্তি হবেন ৷

**চেয়ারম্যান সালিসী পরিষদের প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য কতদিনের মধ্যে পক্ষদ্বয়কে নোটিশ দিবেন এবং পক্ষদ্বয় কতদিনের মধ্যে তাদের প্রতিনিধি মনোনয়ন করে চেয়ারম্যানের  কাছে পাঠাবেন

চেয়ারম্যানের নিকট বহুবিবাহের অথবা খোরপোশের  দরখাস্ত পেশ করা হলে অথবা তালাকের নোটিশ এলে তিনি উভয় পক্ষকে এই মর্মে নোটিশ দিবেন যে , এই নোটিশ পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে প্রত্যেকপক্ষ লিখিতভাবে নিজ নিজ প্রতিনিধির নাম মনোনিত করে হাতে হাতে বা রেজিস্ট্রি ডাক যোগে চেয়ারম্যানের নিকট জমা দিবেন ৷

**যদি কোন পক্ষ প্রতিনিধি মনোনয়ন করতে ব্যর্থ হয়  তাহলে কি হবে
কোনো পক্ষ যদি প্রতিনিধি মনোনিত করতে ব্যর্থ হয় তবে ঐ প্রতিনিধি ছাড়াই সালিস পরিষদ গঠিত হবে৷

**চেয়ারম্যান নিজেই আবেদন করতে চাইলে বা চেয়ারম্যান অমুসলিম হলে অথবা তিনি দায়িত্ব পালন করতে ইচ্ছা প্রকাশ  না করলে সালিসী পরিষদ কিভাবে গঠিত হবে
কোনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অমুসলিম হলে অথবা চেয়ারম্যান নিজেই যদি সালিসী পরিষদের নিকট কোন আবেদন করতে চান বা অসুস্থতা অথবা অন্যকোন কারনে দায়িত্ব পালন করতে ইচ্ছা প্রকাশ না করেন , সেক্ষেত্রে ঐ ইউনিয়ন অথবা পৌরসভা হতে একজন মুসলিম সদস্য সালিসী পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন৷

**যদি চেয়ারম্যানকে নিরপেক্ষ মনে না হয় তাহলে করণীয় কি ?
যদি কোন পক্ষের নিকট  মনে হয় যে , চেয়ারম্যান অন্য পক্ষের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছেন তবে উক্ত পক্ষ অন্য চেয়ারম্যান নিযুক্তির জন্য নির্ধারিত ব্যক্তির ( জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ) নিকট যুক্তিসংগত কারন উল্লেখ করে লিখিত আবেদন করতে পারবেন৷ তিনি (নির্ধারিত ব্যক্তি ) যুক্তিসংগত মনে করলে ঐ পরিষদের অন্য কোন  মুসলিম সদস্যকে  সালিসী পরিষদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করতে পারবেন৷

**কোন পক্ষ মনোনিত প্রতিনিধি পরিবর্তন করতে চাইলে সেক্ষেত্রে করণীয় কি ?
কোন পক্ষের মনোনিত প্রতিনিধি যদি মারা যান , অসুস্থ হন বা অন্য কোন কারনে সালিসী বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন কিংবা পরে ঐ বৈঠকের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন , সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের পূর্ব অনুমতি নিয়ে পূর্বের মনোনয়ন বাতিল করে নূতন প্রতিনিধি মনোনীত করতে পারবেন৷ এক্ষেত্রে চেয়ারম্যান কর্তৃক মঞ্জুরকৃত সময়ের মধ্যে নতুন প্রতিনিধি মনোনয়ন করতে হবে৷

**কোন পক্ষ নিজেই সালিসী পরিষদের প্রতিনিধি হতে চাইলে তিনি তা হতে পারবেন কি ?
সালিসী পরিষদের  নিকট দায়েরকৃত  অভিযোগের সাথে জড়িত কোন পক্ষ সংশ্লিষ্ট অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য এই পরিষদের প্রতিনিধি হিসাবে মনোনীত হতে পারবেন না৷

সবসময় মনে রাখবেন , সালিসী ব্যবস্থা একটি আনুষ্ঠানিক সভা৷ যেখানে সালিসদার বিবাদরত দুটি দলের মাঝে এক থেকে দুই মাসের মধ্যে ( যত শীঘ্র সম্ভব ) নাম মাত্র খরচে মানসিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক ঠিক রেখে কোন মীমাংসায় পৌঁছাতে সহায়তা করেন৷ এখানে কোন শাস্তির ব্যবস্থা থাকেনা কিংবা কাউকে জরিমানা করারও বিধান নেই৷

৪) সালিসী পরিষদের এখতিয়ার
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ - ১ঌ৬১ তে সালিসী পরিষদের এখতিয়ার সম্পর্কে বলা আছে ৷ সে মতে তালাক , বহুবিবাহ ও খোরপোষ সংক্রান্ত  বিরোধসমূহের  মীমাংসা  সালিসী পরিষদ করতে পারবে৷ যেমন -

.:: তালাকের ক্ষেত্রে - তালাকের নোটিশ পাওয়ার পর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব কি?
তালাকের নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান উভয়পক্ষের মনোনীত প্রতিনিধি নিয়ে সালিসী পরিষদ গঠন করবেন৷ সালিসী পরিষদ উভয়পক্ষকে ডেকে সমঝোতার চেষ্টা করবেন৷ সমঝোতার চেষ্টা সফল হতে পারে, আবার ব্যর্থ হতে পারে৷ সমঝোতার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী মিলে গেলে তালাক কার্যকরী হবে না৷ তবে সালিসী পরিষদের মাধ্যমে কোন উদ্যোগ নেয়া না হলে নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিন পর তালাক কার্যকরী বলে গণ্য হবে৷

.:: খোরপোষের ক্ষেত্রে - স্ত্রী খোরপোষ দাবি করে আবেদন করলে  সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব কি হবে এবং চেয়ারম্যান কিভাবে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করে দিবেন
আইনগত অন্য বিধান থাকা সত্বেও স্ত্রী খোরপোষ দাবী করে স্বামীর বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করতে পারবেন৷ আবেদন পাওয়ার পর চেয়ারম্যান স্ত্রী এবং স্বামী উভয় পক্ষের মনোনীত একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে সালিসী পরিষদ গঠন করবেন৷ সালিসী পরিষদ স্ত্রীর দাবির যুক্তি, উভয়পক্ষের সামাজিক অবস্থান যাচাই করে খোরপোষের পরিমাণ নির্ধারণ করে সিদ্ধান্ত দেবেন এবং সে মোতাবেক একটি সার্টিফিকেট প্রদান করবেন৷ সিদ্ধান্ত মোতাবেক খোরেপাষ এর জন্য নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ না করলে তা বকেয়া ভূমি রাজস্ব আদায়ের মতো আদায়যোগ্য হবে৷

.:: বহুবিবাহের ক্ষেত্রে - বহুবিবাহ করার জন্য কেউ চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করলে চেয়ারম্যান  কি করবেন এবং কি কি কারণ থাকলে  বহু বিবাহের অনুমতি দিবেন
আবেদন পত্র পাওয়ার পর চেয়ারম্যান স্ত্রী এবং স্বামী উভয় পক্ষের পছন্দ মত একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে সালিসী পরিষদ (Arbitration Council) গঠন করবেন৷  সালিসী পরিষদের কাছে স্বামীর আর একটি বিবাহ করার ইচ্ছা ন্যায়সঙ্গত মনে হলে তারা স্বামীকে বহুবিবাহ করার জন্য তারিখ ও স্মারক নং সহ লিখিত অনুমতিপত্র দেবেন৷ তবে বহুবিবাহের অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে সালিসী পরিষদ যে বিষয়গুলো বিবেচনায় আনবেন সেগুলো  হলো :

·         বতর্মান স্ত্রীর বন্ধ্যাত্ব,

·         শারীরিক মারাত্বক দূর্বলতা,

·         দাম্পত্য জীবন পালনে অক্ষমতা,

·         মানসিকভাবে অসুস্থতা এবং আদালতের নিকট গ্রহণযোগ্য  অন্যান্য কারণ ইত্যাদি৷

সালিসী পরিষদের বিনা অনুমতিতে বহুবিবাহ  করলে স্ত্রী  এক্ষেত্রে কি ব্যবস্থা নিতে পারেন
কোন ব্যক্তি যদি সালিসী পরিষদ এর অনুমতি ব্যতিত উল্লেখিত আইনগত পদ্ধতি লংঘন করে বহুবিবাহ করে তাহলে স্ত্রী আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন৷ স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে স্বামীর একবছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয়বিধ দন্ড হবে৷ প্রয়োজন মনে করলে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারেন এবং বকেয়া সম্পূর্ণ দেনমোহরের টাকা ভুমি রাজস্ব রূপে  আদায়যোগ্য হবে৷

এর বাইরে  ছোট-খাট ঝগড়া-বিবাদ ব্যতীত অন্য কোন বিরোধ মীমাংসা করার ক্ষমতা সালিসী পরিষদের নাই৷

৫) যে সকল বিষয়ে সালিসী করা যাবে না :
বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৫ নং ধারা অনুযায়ী অনেকগুলো গুরুতর অপরাধ সালিসীতে মীমাংসা করা যাবে না৷ এর মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে :

১৷ যে কোনো কারণে সংঘটিত হত্যাকান্ড
২৷ ধর্ষণ
৩৷ অপহরণ
৪৷ ডাকাতি এবং
৫৷ আরও বিভিন্ন গুরুতর অপরাধ ৷

উদাহরণ :আবুল হাশেমের বাড়িতে রোজী নামে এক মেয়ে কাজ করতো ৷ কোন একদিন বাড়ীতে কেউ না থাকার সুযোগে হাশেম রোজীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করলো ৷ রোজী মামলা করবে বলে উল্লেখ করলে হাশেম রোজীকে ভুল বুঝিয়ে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সালিসীতে রাজি করালো ৷ গ্রাম্য সালিস হাশেমকে দোষী সাব্যস্ত করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে বললো ৷ এই মীমাংসাটি সঠিক নয় ৷ কারণ বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণ সালিসী বৈঠকে মীমাংসাযোগ্য নয় ৷

সুত্র: http://www.abolombon.org